জি. এম.এস রুবেল: ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারির দুদিন ব্যাপী খুলনার শাহপুরে সফল সমাপ্তি হলো বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব-২০২৩। এই নিয়ে এলালাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। স্থানীয় দর্শকরা বলেন, আমাদের এলাকায় আর কখনো এমন অনু্ষ্ঠান হয়নি, আমরা অভিভুত।

‘তোমার স্বপ্ন ছড়াবো বিশ্বময়’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুরে ১ম শাহপুর বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও উদ্বোধক সাবেক মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী বাবু নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি। তিনি এ ঐতিহাসিক আয়োজনের ভুয়সী প্রশংসা করেন। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা জেলার প্রতিটা ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব আয়োজনের জন্য তিনি অঙ্গীকার করেন। গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারির দুদিনব্যাপী এ নাট্য উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিএম আব্দুস সালাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড, রুবেল আনছার, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খান শাকুর উদ্দিন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ আমেরিকা কালচারাল সোসাইটি এর আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আমেরিকা কালচারাল সোসাইটি ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি মেসবাহুল আলম টুটুল। উৎসবে অংশগ্রহনকারি প্রায় ৬ হাজার দর্শকের সবাই উচ্ছাস প্রাকাশ করতে দেখা যায়। তারা বলেন, নিয়মিত এই উৎসব চলতে থাকলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে সাধারণ মানুষের সহজ হবে।

আমেরিকা প্রবাসী লেখক ও নাট্যকার খান শওকত রচিত নাটকসমুহ বাংলাদেশের ৫টি নাট্যদল শাহপুরে তাদের নাটক মঞ্চস্থ করেন। খান শওকত ইতোমধ্যে ভারতের কলকাতায় তার রচিত নাটক মঞ্চায়নের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবের সূচনা করেছেন। শাহপুরের উৎসবেও কলকাতার ৩টি নাট্য গ্রুপের অংশগ্রহনের কথা ছিলো। কিন্তু ভিসা বিষয়ক জটিলতার জন্য তারা যথাসময়ে খুলনায় পৌছাতে পারেনি।

উৎসবে মঞ্চস্ত হওয়া খান শওকত রচিত নাটকগুলো মধ্যে ছিল: ঝিনাইদহ অংকুর নাট্য একাডেমি পরিবেশিত জসিম উদ্দীন আপন নির্দেশনায় হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু।এতে কলাকুশলী ছিলেন- মীর আরিয়ান, রাকিব হাসান, হৃদয় আহমেদ, রিয়াদ আহমেদ, বিল্লাল হোসেন, আদিবা নওরিন পারিসা, সোহানা আফরিন শান্তা, জয় হোসেন, অনিক ঘোষ, দিপ বিশ্বাস, সৌরভ হোসেন, পরশ কুন্ডু, সাফিনা আব্দুল্লাহ পপি এবং খসরুজ্জামান বাবু।

ফরিদপুর বৈশাখী নাট্যগোষ্ঠী পরিবেশিত শাহ জাহাঙ্গীর নিদের্শিত নাটক, আমার বাড়ি টুঙ্গীপাড়া। এতে একক অভিনয় করেন, শাহ জাহাঙ্গীর।

ঝিনাইদহ শিশু কিশোর নাট্য দল এর পরিবেশনা জসিম উদ্দীন আপন এর নির্দেশনায় নাটক, খুনী মোশতাক। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন- রাকিব হাসান, মীর আরিয়ান, বিল্লাল হোসেন, হৃদয় আহমেদ।

ঢাকা নাটঘর রেপার্টরি পরিবেশনায় নাটক, মহা-চক্রান্তে বাকশাল। নির্দেশনায় ছিলেন, শাহজাহান সোবহান। কুশীলব: খন্দকার মোস্তাক চরীত্রে- উজ্জল লস্কর, মাহবুবুল আলম চাষি – জি. এম. এস রুবেল। নেপথ্যে: শাহজাহান শোভন ও নুশরাত জাহান শুদ্ধি।মিউজিক করেনঃ মোঃ রাকিবুল।

এবং ঢাকা নাট্যভূমি, পরিবেশনা নাটক, শহীদ রাসেল। নির্দেশনায় শাহজাহান শোভন। কুশীলব ছিলেন: শেখ রাসেল চরীত্রে- নুশরাত জাহান শুদ্ধি, আব্দুল মান্নান – শাহজাহান শোভন, ইমাম – মোঃ রাকিবুল ইসলাম, মিলিটারি – আশরাফুল শ্রাবণ, মিউজিক – জি.এম.এস রুবেল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষন ছিলো কলকাতার প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী বহ্নিশিখা ভট্টাচার্য। তিনি দেশাত্ব বোধক, লোক সঙ্গীত, নজরুল ও রবীন্দ্র সংগীতের সাথে ক্লাসিক্যাল নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর গৌরাঙ্গ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কন্ঠ শিল্পী- নির্ঝর সাহা, মনিষা মন্ডল, সাধনা মন্ডল, শ্রুতি বিশ্বাস, অর্থি সাহা ও গৌরাঙ্গ বিশ্বাস। নৃত্য পরিবেশন করেন- শশী চক্রবর্তী, মেঘা সাহা, তিথি মুখার্জী এবং খুলনা শিল্পকলা একাডেমি থেকে আসা একদল নৃত্যশিল্পীর নাচের অনুষ্ঠান সবাইকে মুগ্ধ করে। উপস্থিত কয়েক হাজার দর্শক মন্ত্রমুগ্ধের মতো পুরো অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। তারা সবাই বলেন, অত্র এলাকায় এ ধরনের আয়োজন তারা এবারই প্রথম দেখছেন। শীঘ্রই ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার প্রতিটা ইউনিয়নে, বাংলাদেশ ও কলকাতার বিভিন্ন জেলায় বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব আয়োজন করা হবে। আগামী ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বাংলাদেশের ৩টি জেলায় খান শওকতের লেখা নাটক নিয়ে নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৬০ সালে নাট্যকার খান শওকতের জন্ম এই শাহপুর গ্রামেই। এ উৎসবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। সবার অংশগ্রহনে এমন সুন্দর অনুষ্ঠান সম্পন্ন করায় তিনি এলাকাবাসীর প্রতি, বাংলাদেশ আমেরিকা কালচারাল সোসাইটির প্রতি এবং অংশগ্রহনকারি সকল নাট্য সংগঠনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।