মাসুদ আলম, চলচ্চিত্র প্রতিবেদক :: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২১ বিজয়ীদের হাতে
সরাসরি উপস্থিত হয়ে পুরস্কার তুলে দিলেন। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন
কেন্দ্রে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শিল্পী-কুশলীদের হাতে ট্রফি ও পদক তুলে দেন তিনি।
এর আগে ২০১৯ ও ২০২০ সালের পুরস্কার আসরে করোনা মহামারির কারণে প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থাকতে
পারেননি। ফলে দুই বছর পর তাঁর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়া এবং কুশল বিনিময়ের সুযোগ পেলেন শিল্পী, নির্মাতা,
প্রযোজক ও সংশ্লিষ্টরা।
এবারের আসরে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। এর মধ্যে ডলি জহুর নিজ হাতেই
পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। তবে দেশের বাইরে থাকায় উপস্থিত ছিলেন না ইলিয়াস কাঞ্চন। এজন্য তার পক্ষে তার বোনের কন্যা
সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।
পুরস্কার গ্রহণ শেষে নন্দিত অভিনেত্রী ডলি জহুর বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশে এফডিসি প্রতিষ্ঠাসহ অনেক পদক্ষেপ
নিয়েছিলেন। যার জন্য আমরা কাজের সুযোগ পেয়েছি, আমি ডলি জহুর হতে পেরেছি। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই পথ
অনুসরণ করে অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এজন্য সবার পক্ষ থেকে আমি তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আজকের এই আয়োজনে
আজীবন সম্মাননা পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শিল্পী-কুশলীদের আরও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজের
জন্য উৎসাহ দেবে বলে আমি মনে করছি।’
পুরস্কার প্রদান শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
এটা আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই দেশের অভ্যুত্থানের সঙ্গে মার্চ অত্যন্ত গভীরভাবে মিশে আছে। ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন, ৭
মার্চ তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস; এই মাসে আপনাদের সামনে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। বঙ্গবন্ধু
শুধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে যাননি, আজকে যে সিনেমা শিল্প গড়ে উঠেছে, এর সূচনা করেছিলেন তিনি।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘করোনা মহামারির সময়েও আমরা পুরস্কার
স্থগিত রাখিনি। কম সংখ্যক ছবি মুক্তি পেয়েছিলো, অনেকে বলেছিলো, ওই বছর পুরস্কার না দিলে ভালো হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ
দিয়েছিলেন, দিতে হবে। যারা এই পরিস্থিতির মধ্যে ঝুঁকি নিয়েছে, কাজ করেছে, তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্য পুরস্কার দিতে হবে।’
বিশ্বজুড়ে সিনেমা শিল্প হুমকির মুখে পড়লেও বাংলাদেশের সিনেমা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী। তার ভাষ্য, ‘সারা বিশ্বে
সিনেমা শিল্প নানা চাপ ও হুমকির মুখে পড়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব অঙ্গনে
পুরস্কৃত হয়েছে, সুনাম কুড়িয়েছে।’
এক নজরে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২১’ বিজয়ীরা
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (যৌথভাবে): লাল মোরগের ঝুঁটি (মাতিয়া বানু শুকু) ও নোনাজলের কাব্য (রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত)
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (যৌথভাবে): মো. সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল)
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (যৌথভাবে) আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-পার্শ্ব চরিত্রে: এম ফজলুর রহমান বাবু (নোনাজলের কাব্য)
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী-পার্শ্ব চরিত্রে: শম্পা রেজা (পদ্মপুরাণ)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-খল চরিত্রে: মো. আবদুল মান্নান জয়রাজ (লাল মোরগের ঝুঁটি)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা-কৌতুক চরিত্রে: প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য্য মিলন (মৃধা বনাম মৃধা)
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: আফিয়া তাবাসসুম (রেহানা মরিয়ম নূর)
শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার: জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়)
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন)
শ্রেষ্ঠ গায়ক: কে. এম. আবদুল্লাহ-আল-মুর্তজা মুহিন (শোনাতে এসেছি আজ-পদ্মপুরাণ)
শ্রেষ্ঠ গায়িকা: চন্দনা মজুমদার (দেখলে ছবি পাগল হবি-পদ্মপুরাণ)
শ্রেষ্ঠ গীতিকার: প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন)
শ্রেষ্ঠ সুরকার: সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন)
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য)
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি)
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ)
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি)
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক: শিহাব নূরুন নবী (নোনাজলের কাব্য)
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক (দলগত): সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি)
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর)
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা: ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য)
শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যান (দলগত): মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি)
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: আকা রেজা গালিব (ধড়)
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: কাওসার চৌধুরী (বধ্যভূমিতে একদিন)
মুজিববর্ষের বিশেষ চলচ্চিত্র: টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই (পিংকি আক্তার)
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে করোনা মহামারি ভয়ানক রূপ ধারণ করেছিলো। যার ফলে স্থবির হয়ে পড়ে সিনেমা অঙ্গনও। এ কারণে সারা
বছরে মোটে ৩২টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিলো। সেগুলোর মধ্য থেকে জমা পড়া ছবিগুলো বাছাই করেই বিজয়ী নির্ধারণ করেছে জুরিবোর্ড।
Leave a Reply